প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত নিয়োগের আগেই আট পাইলট ও ছয় কো-পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) মিলিয়ে ১৪ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ পাঠিয়েছে। বিমানের মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে তাঁদের এই প্রশিক্ষণে পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই ১৪ জন ব্যাংককে থাই এয়ারওয়েজের ট্রেনিং সেন্টারে সিম্যুলেটর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।'
-এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল ২৪খবর বিডিকে বলেন, পাইলট ও কো-পাইলট পদে প্রাথমিকভাবে ১৪ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। তাঁদের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে বিমানের অর্থে ব্যাংককে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাবেন।
তিনি বলেন, 'এই নিয়োগ নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। পরে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী গত সোমবার একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।'
'বিমানের কর্মকর্তারা জানান, পাইলট ও কো-পাইলটের নির্ধারিত শর্ত পূরণ ছাড়াই বিতর্কিত ও অযোগ্য ১৪ জনকে সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিমানের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগ পান। সংস্থাটিতে বর্তমানে বোয়িং ৭৭৭ এর ক্যাপ্টেন হওয়ার যোগ্য অনেক পাইলট থাকলেও তাঁদের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন যাঁরা বিদেশে পাইলট হিসেবে কাজ করে ও যোগ্যতার ঘাটতির কারণে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পাননি, তাঁদেরই নিয়োগ দিয়েছে। এ নিয়ে বিমানের অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।'
'বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এক সময় বিমানে কর্মরত ছিলেন। অর্থের লোভে তাঁরা বিমানের চাকরি ছেড়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে চলে যান। এখন এসব ব্যক্তিকেই দীর্ঘদিন পর শর্তপূরণ ছাড়াই পদোন্নতি দিয়ে বিমানে নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্যদ বোর্ডের সদস্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, পাইলট ও কো-পাইলট নিয়োগের ক্ষেত্রে বিমান যেভাবে বোর্ডকে জানিয়েছে, বোর্ড সেভাবেই কাজ করেছে। জনবল নিয়োগে যেসব কর্মকর্তা বিমান বোর্ডকে ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের দায় বিমানকেই নিতে হবে।'
'প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আসা গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহ নাসিমুল আউয়াল ১২ বছর ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজে কো-পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কয়েকবার ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি। পরে ক্যাপ্টেন হতে পারবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে কো-পাইলটের কাজ চালিয়ে যান।'
-সাদিয়া আহমেদ নাতাশার চাকরি শুরু হয় জিএমজি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে। পরে ইউএস-বাংলা ও রিজেন্ট এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। বিমান চালনায় নানা ত্রুটির কারণে তিনি চাকরিচ্যুত হন। ২০১৬ সালে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার থাকাকালে পজিশনে গিয়েও যথাসময়ে টেকঅফ করতে পারেননি। অথচ ওই অবস্থায় টেকঅফ করা বাধ্যতামূলক। টেকঅফ করতে না পারায় রানওয়ের কার্যক্রম দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে। অভিযোগ রয়েছে ইস্তাম্বুলে ইনিশিয়াল সিম্যুলেটর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। পরে সিম্যুলেটর সেন্টার জাকার্তায় পরিবর্তন করে তাঁকে কোয়ালিফাই করিয়ে আনা হয়।
বিমানে চূড়ান্ত নিয়োগের আগেই ১৪ পাইলটের বিদেশে প্রশিক্ষণ
-হারুন ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজে কো-পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ বছর তিনি কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। পাইলট হওয়ার জন্য কয়েকবার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হন। তাঁর বয়স ৬০ বছরের বেশি।
আবদুল্লাহ মারুফ এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ১৩ বছর কো-পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বয়স ৬০ এর বেশি। ক্যাপ্টেন হিসেবে উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই।
ইরফান কাতার এয়ারওয়েজে ১৩ বছর কো-পাইলট হিসেবে কর্মরত থাকলেও পাইলট হিসেবে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
'শওকত ১২ বছর ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজে কো-পাইলট হিসেবে কর্মরত থাকলেও তাঁর ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাহমিদ ১২ বছর কো-পাইলটের অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁর পাইলটের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এসব ব্যক্তি চূড়ান্ত নিয়োগ পেলে ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বহর।'